তানজিম হাসান সাকিব - মিসোজনিস্ট এবং নারীর প্রতি ডিরেগটরি বক্তব্য এবং ফ্রিডম অফ স্পিচের ভোলাইটাল লিমিট
আমি গত কদিনে বেশ কিছু লিখায় বুঝাতে চেয়েছি- তাঞ্জিম হোসাইন সাকিবের এই ধরনের বক্তব্য হেইট স্পিচ, জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশান এবং রেসিজমের আওতায় পড়ে এবং আমাদের এই অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে ফ্রিডম অফ স্পিচের সাথে হেইট স্পিচের ক্লিয়ার তফাত রয়েছে।
দেশের কোটি কর্মজীবি নারীদের নিয়ে তার করা হেটস্পিচ গুলো, যা সভ্য মানুষদেরকে বেশ অবাক করেছে। একজন দেশের প্রতিনিধিত্ব করা মানুষের কাছ থেকে সকলের প্রত্যাশা অনেক বেশী এবং সেখানে এমন আচরন অবশ্যই কাম্য নয়।
এবং সে যেহেতু বিসিবির খেলোয়ার এবং বিসিবি আইসিসির কোড অফ কন্ডাক্ট মেনে চলে , ফলে তার এই ধরনের বক্তব্য তাকে আন্তর্জাতিক লেভেলে সমস্যায় ফেলবে কারন আইসিসির কোড অফ কন্ডাক্ট অনুযায়ী সে দোষী। এর ফলে সে যেহেতু বিসিবির বেতনভুক্ত খেলোয়ার তার উচিত এই ধরনের বক্তব্য সরিয়ে নেয়া এবং এমন আর হবেনা মর্মে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
সে এই সেইম কাজটি করেছে এবং বিসিবিও এই ধরনের কোড অফ কন্ডাক্ট যাতে ব্রিচ না হয় সেটা নিশ্চিত করবে কথা দিয়েছে। আমার এটা নিয়ে আর কিছু বলার নেই। আমার তাঞ্জিম সাকিব ইস্যু এখানেই শেষ!
বিঃদ্রঃ
# আমি কখনোই তাঞ্জিম সাকিব এর ধর্ম বিশ্বাস কে অবজ্ঞা করে তাকে জেলে দেয়ার কথা বলিনি। কার ধর্ম বিশ্বাস কি আমার এতে মাথা ব্যাথা নেই।
# আমি কখনোই তাঞ্জিম সাকিব কে জাতীয় দল থেকে বাদ দিতে বলিনি, কারন তার কাজ ভাল খেলা! সে খেল্বে এবং কোড অফ কন্ডাক্ট মেনে চলবে। ব্যাস
# আমি যদি রাগের বশে অথবা ট্রল বা হিউমার করতে গিয়ে কোন কমেন্টে বুঝিয়ে ফেলি তাঞ্জিম সাকিবের মুখ চেপে ধরতে সেটা আমার সীমাবদ্ধতা। সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী আমার যারা লেখা পড়েন তাদের কাছে।
এবার আসি ফ্রিডম অফ স্পিসের ভোলাটাইল আলোচনায় -
"I disapprove of what you say, but will defend to the death your right to say it."
—Voltaire
আমরা যারা ফ্রিডম অফ স্পিসের এডভোকেসি করি- তাদের কাছে এই উক্তি বাইবেলের ভার্সের মত। অনেকেই হয়ত একমত নন , কিন্তু আমি স্ট্রংলি মেনে চলার চেষ্টা এই কথা।
তাঞ্জিম হাসান সাকিবের নারী অবমাননার ডিরেগটরি মন্তব্যের কারনে তার প্রতি সরকারি জেল জুলুম অথবা দল থেকে বাদ দেয়ার কোন মতেই পক্ষপাতি নই আমি।
এই ধরনের হটকারি চিন্তা একই সাথে দুইধারী তলোয়ারের মত। আজকে আমি যদি তাঞ্জিম হাসানের এই চিন্তায় বাধা দিতে গিয়ে সরকার কে ইন্টারভিন করতে বলি, আগামি কাল লাখো তাঞ্জিম হাসানেরা আমার চিন্তায় সরকার কে ডেকে আনবে এবং আমার জেল জরিমানা করতে বাধ্য করবে এবং সেটা আমার ফ্রিডম অফ স্পিচের উপর আঘাত! বিষয়টা কাইন্ড অফ প্যারাডক্সের মত!
সরকার রাষ্ট্র চালাবে, এবং রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে, সেটা হোক সবার সমান চাকুরি এবং উচ্চ শিক্ষার অধিকার যেটা তাঞ্জিম সাকিব গং বিরোধিতা করে অথবা ফ্রিডম অফ স্পিচ দেয়ার ক্ষমতা যেটা আবার অনেকে কেড়ে নিতে চায় এবং একই সাথে সকল নাগরিকের বাক স্বাধীনতার অধিকার ও বটে, ইভেন যেটা তাঞ্জিম হাসান সাকিব বলতে চায়, সেটাও! আবারো প্যারাডক্স?
এখন আসুন আরো একটু ডিপ আলোচনায় যাই এবং সেটা তাঞ্জিম সাকিব ইস্যু দিয়েই শুরু হোক।
যদিও আমরা জানি এবং বুঝতে পারছি- তাঞ্জিম সাকিবের এই নারী বিদ্বেষ একটা হেট স্পিচ। এখন এটাকে বাধা দেয়ার জন্য আমি কি সরকারি ইন্টারভেনশান চাই? বা এটাকে কি চলতে দেয়া উচিত? হেট স্পিচ হলেও?
হ্যা, তাঞ্জিম সাকিবের এই হেট স্পিচে সরকারের বাধা দেয়া অনুচিত! সে লিবারেল ভেলুজ, সভ্য সমাজের নর্মস এবং হিউমানিটির আচার এর বিরোধিতা করলেও তাঞ্জিম সাকিবের ফেসবুক পোস্ট বা বক্তব্য চলতে দেয়া উচিত।
কেন? কারন, আমি যে বাক স্বাধীনতা চাই, সেই সেইম ফ্রিডম আমি তাঞ্জিম সাকিবদের জন্য ও চাই! এখন লিবারেল ভেলুজ এর লোকজন এটার প্রতিবাদ করবে, করুক। আমি আইসিসি কোড অফ কন্ডাক্ট মনে করিয়ে দিয়ে তাকে সাজেস্ট করব আর যাতে না করে , করতেই থাকব।
বাট যতক্ষন পর্যন্ত সে বডিলি হার্ম না করছে কাউকে, কিংবা সরাসরি প্রভোক না করছে বডিলি হার্মের ততক্ষন পর্যন্ত সরকারের কোন ধরনের হস্তক্ষেপের বিরোধী আমি।
এই বডিলি হার্ম টার্ম টা কেমন?
ধরা যাক- তাঞ্জিম সাকিব ফেসবুকে পোস্ট করলো-
"নারীর চাকুরি করলে সমাজ নস্ট হয়, পরিবার নস্ট হয় এবং নারী বাইরে যাওয়ার কারনে তাকে হাজারো পুরুষ দেখে বাজে কামনা করলো এবং এই বাজে কামনা এই নারীর স্বামীকে দায়ুস বানালো। এই অবস্থায় এই নারীকে মানা করা একজন স্বামীর দায়িত্ব এবং সেটা না শুনলে তাকে প্রহার করা উচিত।
কারন পবিত্র কোরানে আছে-
" আর যাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কোন অবাধ্যতা খুঁজে পাও তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর।" - সুরা নিসা আয়াত ৩৪ " Surah Nisa
এই পোস্ট দেখে যদি কেউ তার স্ত্রীকে প্রহার করে, তাহলে রাষ্ট্র সেই স্বামীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯ এবং ৪০ মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবে এবং ইভেন ফৌজদারী মামলা ও করতে পারবে সেই নারী ফিজিকাল হার্মের জন্য। এখানে রাষ্ট্র তার এক্সক্সিস্টিং আইন দিয়ে নারীকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে, কেউ সেই আইন ভংগ করলে সাজা পাবে।
এখন একই সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র কি সাকিব তাঞ্জিম কে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে এবং সেটা কি একজন ফ্রিডম অফ স্পিচের এডভোকেট হিসেবে আমি চাই? উত্তরঃ যথাক্রমে- হ্যা, এবং না
রাষ্ট্র স্রেফ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪১- (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; ধর্মীয় স্বাধীনতা-৪১. (১)
এই ধারায় মাইর পিট করার জন্য ধর্ম কে ইউজ করতে এটার অপব্যবহার দেখিয়েই তাঞ্জিম কে আইনের আওতায় আনতে পারবে।
আমি কি এমন চাই? এটাও প্যারাডক্স- আমার ফেবু পোস্ট দেখে আরেকজন বউ পিটাইছে এটা আসলে অনেক অনেক দূরের নোটেবল লীপ হিসেবে ধরা যায়। অনেকটা ইউটিউবে ভিডিও দেখে ত্বিন ফলের চাষ করতে গিয়ে কোটি টাকা লস হলে, সেই লসের দায়ে একই সাথে গুগুল এবং ইউটিউবার কে আইনের আওতায় আনতে পারার মত ব্যাপার।
সো আমি এমন চাইনা। বাট আমার চাওয়া না চাওয়া ম্যাটার করেনা, কারন আমি যেই রাষ্ট্র ইঞ্জিনের অধীনে সেখানে এটা সংবিধান দিয়ে বিধিসম্মত।
এখন , একজন লিবারেল সভ্য ভেলু মেনে চলা মানুষের প্রতিবাদ কি হতে পারে? বা, তাঞ্জিমের কোন কাজে রাষ্ট্র বাধা দিলে সেটাকে আমি জাস্টিফাই মনে করব?
লিবারেল সোসাইটি তার এই স্ট্যাণ্ড এর বিরোধিতা করতে পারবে, মত দিতে পারবে কেন এটা ক্ষতিকর এবং অন্যায়। একই সাথে পালটা শত যুক্তি তুলে ধরতে পারবে। কিন্তু রাস্ট্রকে ডেকে এনে তাকে জেলে ঢুকাতে বলা অথবা তার কল্লা ফেলতে চাওয়া কিংবা দল থেকে বাদ দেয়ার কাজ করলে সেটা আর লিবারেল ভেলুজ থাকেনা। হয়ে যায় এক্সট্রিসিজম বা ফান্ডামেন্টালিস্ট দের কাজ।
আর রাষ্ট্র কখন তাঞ্জিম কে আইনের আওতায় আনতে পারবে? যখন তাঞ্জিম তার ফিমেল কম্পানিয়ন অর্থাৎ মা, বউ, বোন কে বাধা দিবে বা মারপিট করবে চাকুরি বা উচ্চশিক্ষার জন্য তখন। তাও রাষ্ট্রের এক্সিস্টিং আইনে।
রাষ্ট্রের কাজ তাঞ্জিমের অন্যায় নারী অবমাননা পোস্টের বাধা দেয়া নয়, রাষ্ট্রের কাজ তাঞ্জিম যাদের কে বাধা দেয়ার কথা প্রকাশ করে, সেই নারী যাতে কোন বাধা না পায় সেটা এন্সিউর করা! এ ছাড়া কারো পারসোনাল বক্তব্যে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।
এবার সবচেয়ে বড় প্রশ্নঃ আমরা কিভাবে লিবারেল সোসাইটির বেসিক প্রিন্সিপাল এন্সিউর করব? আসলে আমাদের রাষ্ট্র সাংবিধানিক ভাবে লিবারেল এবং সেকুলার হলেও সামাজিক ভাবে এখনো বিগেটরি এবং ধর্মান্ধ। এই সামাজিক পরিবর্তন রাষ্ট্র বা আইন দিয়ে হয়না। এটা করতে হয়- নলেজ এবং ভেলুজ ক্রিয়েশান এবং প্রচার দিয়ে। এই কাজ আমরা যারা নিজেদের কে সেকুলার এবং লিবারেল ভাবি তাদের এবং এটা যদি আমরা করে সমাজ পরিবর্তন করতে না পারি সেটা আমাদের ফেইলিওর এবং আমাদের ফেইলিওর ঢাকার জন্য রাস্ট্রকে ডেকে এনে তাঞ্জিম সাকিব দের ফ্রিডম অফ স্পিচে ( হোক সেটা হেইট স্পিচ) বাধা দেয়া অনুচিত।
কারন- ফ্রিডম অফ স্পিচ ইজ দা অনলি বেসিক হিউমান রাইটস! বাকি সব সামাজিক কন্সট্রাক্ট ভিত্তিক ফোর্সড নির্মিত রাইটস। এবং এই রাইটস কে ডিফেন্ড করতেই হবে যেকোন কিছুর বিনিময়ে।




