ইসলাম, মুক্ত বাজার অর্থনীতি ক্যাপিটালিজমের প্রথম পাঠ এবং বাংলাদেশের কোরবানির গরুর অতিরিক্ত দাম সমাচার।
মহানবীর মদিনা বিজয়ের অল্প কিছুকাল পরের কথা। সেবার একবছর প্রচন্ড খরায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিল ঐ অঞ্চলে। খেজুর বাগানের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টি ও হলোনা। ফলে খাবারের দাম আকাশ ছুতে বেশী দেরি হল না।
সাহাবী আনাসের ভাষ্যে-
Narrated Anas: “Prices became excessive during the time of the Messenger of Allah (pbuh)[5], so they said: ‘O Messenger of Allah! Set prices for us!’
( সংক্ষিপ্ত অনুবাদঃ সাহাবীরা এলেন নবীজির কাছে। এসে বললেন- হে খোদার প্রেরিত রাসুল, কিছু একটা করুন। বাজারে দাম বেড়ে গেছে অনেক। আপনি একটা দাম নির্ধারন করে দিন। )
So he said: ‘Indeed Allah is Al-Musa’ir, Al-Qabid, Al-Basir, Ar-Razzaq. And I am hopeful that I meet my Lord and none of you are seeking (recompense from) me for an injustice involving blood or wealth. .
( সংক্ষিপ্ত অনুবাদঃ নবী বললেন- খোদার দুনিয়ার কোন জিনিষের কত দাম হবে সেটা ঠিক করার আমি কে? মহান আল্লাহই সত্যিকারের বিচারক এবং তিনিই ঠিক করে দিবেন কোনটার কত দাম! আজকে যদি আমি দাম ফিক্স করে দেই- শেষ বিচারের দিন আমি কোন ব্যাবসায়ির প্রতি অবিচারের বোঝা মাথায় নিয়ে মহান আল্লাহ্র মুখোমুখি হতে রাজি নই )
ইসলামের প্রাক ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাই- ইসলাম শুরু হয়েছিল দুনিয়ার সবচেয়ে বিজনেস ফ্রেন্ডলি অঞ্চলে। আরবের ধূধূ প্রান্তরে , সিল্ক রোডের আগে ইস্ট আর ওয়েস্ট এর একমাত্র ট্রেড রুটে।
As anthropologist Robert W. Hefner notes, “by any measure, the scriptural and early historical legacy of Islam is among the most market-friendly of all the world religions.”
আরব অঞ্চল কতটা বিজনেস ফ্রেন্ডলি ছিল সেটা ঐতিহাসিক দের কথা থেকেই প্রমান পাওয়া যায়-
The Roman statesman Pliny the Elder opined that the Arab nations were the “richest … in the world” on account of their trade with the Romans and Persians.
The Greek historian Diodorus Siculus concurred, observing that “commercial pursuits are the chief cause of their greater prosperity.”
ইসলাম সব সময়ই বিজনেস ফ্রেন্ডলি একটা রিলিজিয়ন ছিল। কঠিন শর্তের বেড়াজালে আটকে থাকা ইহুদি শাইলক দের সুদের হাত থেকে মক্কা বাসীকে রক্ষা করতে নবী সুদের উপর ঘোষণা করলেন এক অঘোষিত লড়াই ! সেটাকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করে একদিনে মনিটারি ইন্সটিটিউটের উপর রাস্ট্রের সরাসরি আঘাত করলেন,
অন্যদিকে বাজার কে বাজারের মত চলতে দিলেন! বাজার ঠিক করবে বাজারের জিনিষের দাম কত হবে। কারন আজীবনের ঝানু ট্রেডার নবীজি জানতেন- বিজনেসের মূল বিষয়! রাষ্ট্র যখন থেকেই বাজারের দামের উপর প্রভাব বিস্টার করবে তখনি বিজনেস আর বিজনেস থাকবেনা।
অনেকে বলে থাকে ইসলাম একটা পলিটিকাল রিলিজিয়ন। না , এটা ভুল। ইসলাম মারাত্মক ভাবে একটা ব্যবসায়ীক রিলিজিয়ন এবং ব্যবসা রক্ষার্থেই ইস্লাম নিজেকে পলিটিকাল রুপ দিয়ে বাধ্য হয়েছে।
ঠিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হয়ে ঢুকে ব্রিটিশ রাজ হিসেবে এশিয়ায় প্রতিষ্ঠা লাভের কাহিনীর মতই।
নবী মুহাম্মাদ স্ট্রংলি বিশ্বাস করতেন রাষ্ট্র ব্যবসায় হাত দিবেনা। এবং এই থিউরি একসময় পশ্চিমা ইকোনমিস্ট রা গ্রহন করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
During Muhammad’s time in Medina, he introduced an innovation known as the derestriction of prices. Government price controls had been standard practise since the time of the Babylonian empire.
But after a famine in Medina, when food prices spiked and Muhammad’s followers asked him to set a cap on them, he refused, claiming that “prices are in the hands of God,” and that no government had the authority to set them.
As historian Benedikt Koehler has noted, this is essentially the same position Adam Smith later took in arguing that markets tend to self-correct as if by an invisible hand.
এ থেকে আমরা দেখতে পাই- ইসলামের বেসিক বিজনেস মাইন্ডসেট কখনোই ক্যাপিটালিজমের ব্যাতিক্রম নয় বরং অনেকটা কাছাকাছিও বটে।
ইভেন- বর্তমান ক্যাপিটালিস্ট দুনিয়ার ভেঞ্চার ক্যাপিটালিজম এর ইসলামিক রুপ হিসেবে আমরা দেখতে পাই ইসলামিক ইকোনমিক ইন্সট্রুমেন্ট ( qirad ) কিরাদ কে। এখানে নিয়ম ছিল- ট্রেডিং ক্যারাভানে কোন এক ইনভেস্টর ইনভেস্ট করতেন এবং সেটার লাভ ক্ষতি সমান ভাবে ভাগ হত, বাট যদি কোন লস হত সেটা একান্তই ইনভেস্টর বহন করত। নবী মুহাম্মাদের প্রথম স্ত্রী আরবের প্রখ্যত বিজনেস ঔমেন খাদিজা (রা) নিজেও এই সিস্টেমেই বিনিয়োগ করতেন।
ইভেন, অনেক অনেক পরে ভেনিসের ইহুদি ব্যবসায়ীরা তাদের সমুদ্রগামী জাহাজ কাফেলায় এই ধরনের বিনিয়োগ করত এবং এর নাম দিয়েছিল তারা ( commenda ) ।
অনেক ঐতিহাসিক এর মতে, ইউরোপের আজকের এই উন্নতি পেছনে যতটা না রোম অথবা এথেন্স এর পলিটিকাল পাওয়ার কাজ করছে তার চেয়ে বেশী কাজ করছে ইতালির ভেনিস আর জেনোয়ার ইকোনমিক হিস্টোরি কারন এই অঞ্চল হয়েই মুসলিম সভ্যতার সাথে সবচেয়ে বেশি ট্রেডিং হয়েছিল।
As Koehler notes, the epicentres of commercial innovation in Europe were not the centres of political power, such as Rome or Paris; instead they were Venice and Genoa, the city states that engaged in the most trade with the Muslim world. Whether Islamic capitalist innovation sparked European innovation, or the two developed independently, it is clear that capitalist institutions and commercial practices were not solely a European phenomenon.
সো, যখন ক্যাপিটালিস্ট দুনিয়ায় আপনি আপনার পণ্যের দাম বাড়াতে চাইবেন ম্যাক্সিমাম প্রফিট এর জন্য আর সেটার জন্য আপনার ভোক্তা ইসলামের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কামনা করবে সেটা কোন মতেই ইসলাম সম্মত হয়না।
এখন পবিত্র ঈদুল আজহার সময়, অনেকে সারা বছর লাইভ স্টক লালন পালন করেন এই সিজনে এসে ভাল দামে বিক্রি করার জন্য। পলিটিকাল ও ইকোনমিকাল ভিত্তির উপর দাড়িঁয়ে থাকা ইসলামের নামে কৃষকের এই ম্যাক্সিমাম লাভ করতে চাওয়াকে হারাম বলে আখ্যা দেয়া একটা ভুল স্টেটমেন্ট বলেই মনে করি আমি পারসোনালি।
মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে আমার উৎপাদিত জিনিষ আমি আমার দামে বিক্রি করব। এই দাম নির্ধারন হবে আমার আর আবার ক্রেতার দরাদরির মাধ্যমে কোন এন্টিটির ঠিক করে দেয়া দামে না।
The most important feature of the Medinah market was that prices were not fixed or controlled. They were determined via the bargaining of the buyer and the seller. (Çizakça and Akyol, 2012: 15).
যদি আপনার মনে হয় এবার লাইভস্টকের দাম বেশী আপনি নিজেকে সংযত করুন। আপনার আল্লাহ্র কাছে গরুর সাইজ বা মাংস পৌছায় না, একমাত্র আপনার ইবাদত আর স্বদিচ্ছাই সেখানে যায়।
যদি আপনার গরুর দাম বেশি হয়- তাহলে ছাগল বা ভেড়া দিয়ে করতে পারেন, অথবা ভাগে করতে পারেন, অথবা ছোট সাইজের গরু দিয়ে করেন।
এই অঞ্চলের মানুষ হানাফি মাহজাব অনুসরন করেন বেশী, তবে ইসলামে অনেক স্কুল অফ থটস যেমন শাফেঈ, মালেকি আর হাম্বলী মাজহাব অনুসারে কুরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
স্বয়ং হযরত আবুবকর আর উমার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি দেননি সেটা বোঝানোর জন্য।
আপনিও দিয়েন না। সাওয়াব পাবেন না, কিন্তু গুণাহ হবে না ইনশা আল্লাহ।
কিন্তু এরপরেও দয়া করে মুক্ত বাজারের উপর রাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ চাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
The Holy Prophetsa did not slaughter an animal for pleasure’s sake, or with a view to distribute the flesh among his friends or poor relations, but he did so as a religious duty.
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُولَ اللّٰهِ مَا هَذِهِ الْأَضَاحِيُّ قَالَ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللّٰهِ قَالَ بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ قَالُوْا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللّٰهِ قَالَ بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنْ الصُّوفِ حَسَنَةٌ
নবীজি শুধুমাত্র মাংস খাওয়ার নিমিত্তে কিংবা গরীব রিলেটিভস এর মাঝে বিতরনের জন্য কোরবানি করেন নি কখনো, এটা ইসলামে আদেশ দেয়া হয়েছে খোদার নামে সেক্রিফাইস করার জন্য।
এটাকে মাংস খাওয়ার উৎসব থেকে বাদ দিয়ে, স্যাক্রিফাইস হিসেবে পালন করুন হে মুসলিম সমাজ।



চমৎকার লেখা ভাইয়া।